শিক্ষা সংকটে রাজ্য: 26 হাজার শিক্ষক বাতিল, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
Special Report
Purulia (Somnath Gope) : কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় 26 হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে এসেছে গভীর সংকট। এরপর সর্বত্রই পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকা উভয় পক্ষ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। একদিকে যেমন স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন প্রভাবিত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম হতাশা, ক্ষোভ এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা চাকরি বাতিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। 2016 সালের এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। তদন্তে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ে, এবং সেই মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি জালিয়াতি ও অস্বচ্ছতার মাধ্যমে কলঙ্কিত হয়েছে। তাই বাতিল করা হয় 25 হাজার 572 জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। আর এর ফলে রাজ্যের স্কুল গুলিতে পঠনপাঠনে জোর ধাক্কা, চাকরি বাতিলের ফলে রাজ্যের বহু স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা তীব্রভাবে কমে গেছে। বহু স্কুল কার্যত শিক্ষক-শূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষত গ্রামীণ এলাকাগুলিতে পঠনপাঠন কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়েছে। কিছু স্কুলে এক বা দুইজন শিক্ষক দিয়ে পুরো স্কুল চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একেবারেই অবাস্তব। তার প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ভীষণ প্রভাব পড়ছে। অভিভাবকদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আর অন্য দিকে চাকরি বাতিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ, পথে নেমে প্রতিবাদ চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, কসবায়, নদিয়া, হাওড়া সহ একাধিক স্থানে বিক্ষোভের সময় তাদের সাথে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ করা হয়েছে, এমনকি মহিলাদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার তীব্র সামাজিক ও মানসিক প্রভাব পড়ছে চাকরি হারানোর কারণে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিবারে, তার প্রকাশ্যে সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন যে চরম আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকের কাছে ইএমআই বকেয়া, কারও বাড়িভাড়া মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মানসিক অবসাদে ভুগছেন এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আর অন্য দিকে সমাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা কমছে। ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে রাজ্যের শিক্ষা মান দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে উঠছে ভবিষ্যতের প্রশ্ন, এই সংকটের স্থায়ী সমাধান কী? দুর্নীতির দায়ে যাঁরা প্রকৃত দোষী, তাঁদের শাস্তির পাশাপাশি নিরীহ শিক্ষকদের পুনর্বহাল করার উপায় কী? রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে না পারলে এক প্রজন্মের শিক্ষা ভবিষ্যৎ চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।