সমাজকে সচেতন করবে ভুড়কুর পেনশন……

সমাজকে সচেতন করবে ভুড়কুর পেনশন…..


প্রতীকী ছবি

Jamshedpur (Gunadhish Dev) : বরাভূম দর্পণ নিউজ পোর্টালের সঞ্চালক সহ পটমদার সাংবাদিক কল্যাণ কুমার গরাই এর পক্ষ থেকে শনিবার পটমদার ডাক বাংলো পরিসরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ইউটিউব চ্যানেল বরাভূম এন্টারটেনমেন্টের (Barabhum Entertainment) সূচনা করেন প্রবীণ জেএমএম নেতা আস্তিক মাহাতো এবং যুব নেতা মহাবীর মুর্মু। তার সাথেই ইউটিউব চ্যানেলটির প্রথম ভিডিও “ভুড়কুর পেনশন টাকায় মকর পরব” নামের একটি শর্ট ফিল্ম প্রকাশিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে প্রবীণ সাংবাদিক শশাঙ্ক শেখর মাহাতো, বিধায়ক প্রতিনিধি চন্দ্রশেখর টুডু, পটমদা জেলা পরিষদের সদস্য প্রদীপ বেসরা, প্রাক্তন বোড়াম পার্ষদ স্বপন কুমার মাহাতো, জেএমএম নেতা সুভাষ কর্মকার, জিতুলাল মুর্মু, গ্রাম প্রধান বৃন্দাবন দাস, গোপাল কুমার, প্রদীপ কুমার পাইড়া, মুরারি কুমার, ইশান চন্দ্র গোপ, শিশুপাল সিং সর্দার, মিহির কুমার মাহাতো, আনন্দ গরাই, কৃষ্ণ প্রসাদ মাহাতো, বিরু কুমার, সুজিত মাহাতো, সঞ্জয় সিং, করণ কালিন্দী, মনোজ তাঁতী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৃদ্ধ কৃষকের দারিদ্র্যের যন্ত্রণা
ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও লেখক কল্যাণ কুমার গরাই জানান, এতে মকর সংক্রান্তির আগের প্রস্তুতি, দরিদ্র কৃষক পরিবারের কষ্ট, পরিবারের বৃদ্ধদের অবস্থা, বার্ধক্য পেনশন কীভাবে তাদের সম্মান বাড়াচ্ছে ইত্যাদি বিষয় দেখানো হয়।

সমাজের প্রবীণদের প্রতি বিশেষ নজর
চিত্রনাট্য অনুযায়ী, এক দরিদ্র কৃষক তার পরিবারে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ, দুই নাতি ও এক নাতনিকে নিয়ে বসবাস করেন। এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ধান ও সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরিবারের প্রধান ঠাকুরদাস মাহাতো খুবই চিন্তিত। ঝাড়খণ্ডের প্রধান উত্সব টুসুর প্রায় 10 দিন আগে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ঠাকুরদাসের বাবা এবং মা সকাল বেলা রোদে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর, পাশের গ্রাম থেকে আরেকজন বয়স্ক লোক আসেন, যিনি ভুড়কুর (ঠাকুরদাসের বাবা) পুরনো বন্ধু। তার সাথে আড্ডা শুরু হয়।

আপনার কতগুলো সন্তান আছে
ভুড়কুর স্ত্রী মালতী যখন ভুড়কুর পুরনো বন্ধুকে (সুকু কর্মকার) জিজ্ঞেস করে আপনার কয়টি সন্তান আছে? বাড়িতে পুত্র ও পুত্রবধূ তার সাথে ভালো ব্যবহার করে কি না ?তিনি উত্তর দেন তার দুই ছেলে ও চারজন মেয়ে রয়েছে। সবাই বিবাহিত, নাতি-নাতনি নিয়ে একটি সুখী পরিবার রয়েছে তার। পুত্রবধূরা খুব ভালো এবং সংস্কৃতিমনা। তাদের সম্পূর্ণ যত্ন নেয়। এতে মালতী বলে, আপনি ভাগ্যবান যে ভালো পুত্রবধূ পেয়েছন।

চায়ের কথা বলায় তিক্ত হয়ে উঠল পরিবেশ
এদিকে ভুড়কু তার বউকে (মালতী) বলে চা রেডি হয়েছে কি না, আমাদের জন্য চা নিয়ে এসো। উঠান ঝাড়ু দিতে গিয়ে বয়স্ক মালতী যখন তার পুত্রবধূকে (সন্ধ্যা) জিজ্ঞেস করে, চা রেডি হয়েছে কিনা? যদি রেডি হয়ে থাকে তাহলে তোমার শ্বশুর আর আমাদের দুজনের জন্য চা নিয়ে এসো। এই কথা বলার সাথে সাথে পুত্রবধূ রেগে যায় এবং বলে যে এখনো ঝাড়ু দেওয়া বা ঘরের রুটিন কাজ শেষ হয়নি এবং এখনই চায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। সে বলে, আমার কাছ থেকে এত সেবা আশা করবেন না, যারা চা পান করতে চান তারা নিজেরাই তৈরি করে পান করুন। তাছাড়া ক্ষেতে প্রস্তুত পড়ে থাকা ধান ঘরে তুলতে নিজের ছেলেকে সাহায্য করুন। পুত্রবধূর কথা শুনে বৃদ্ধ দম্পতি নিশ্চুপ হয়ে যান, নিজেদের পরিচিতজনের সামনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তাদের। তারপর যখন ভুড়কু আবার তার স্ত্রীকে বলে, যাও মালতী, তুমি চা বানিয়ে নিয়ে এসো, তিনি উত্তর দেন যে আমি আর আগের মতো অবস্থায় নেই যে আমি চা বানিয়ে তাকে পান করাতে পারি। শীতের মৌসুম যত ঘনিয়ে আসে, শরীরে ব্যথা বাড়ছে। এই কথা শুনে ভুড়কু তার পুত্রবধূকে বলে, ঠিক আছে মা, আমি চাষের দিকে যাচ্ছি। ফিরে আসার পর, আমি একবারে আমার খাবার খাব।

ধানের ফসল ভালো না হওয়ায় পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি
কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফেরার পর স্ত্রী ঠাকুরদাসকে জিজ্ঞেস করেন, জমিতে কাটা ধান ভালো হয়েছে কি না? ঠাকুরদাস বলে, আর কী বলব, এত বেশি অপচয় হয়েছে যে সেই বিক্রি করা খুবই কঠিন। অসময়ে বৃষ্টির আগেই টমেটোর ফসল নষ্ট হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ধানের বাকি আশাও শেষ হয়ে গেছে। তখন বউ বলে টুসুতে বাচ্চারাও নতুন জামা কাপড়ের জন্য জেদ করছে, কি করা উচিত? অবস্থা টের পেয়ে স্ত্রী বলল ঠিক আছে বাদ দাও, আগে খাবার খাও তো, তারপর কথা বলব। ঠাকুরদাসকে খাবার দেওয়ার পর, ভুড়কুকে বাড়ি ফিরতে দেখে সন্ধ্যা বলে, বুড়োটাও এসেছে।
তারপর সে তার শ্বশুরকে বলে খাবার খেতে। ভুড়কুও বলে ঠিক আছে মা নিয়ে আসো। তিনি খুব ক্ষুধার্ত ছিলেন। কিন্তু তার পুত্রবধূর খাবার পরিবেশন করার পদ্ধতি মোটেও ঠিক ছিল না, তাই তিনি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেন। এমনকি তার ছেলে যখন গপাগপ করে খাচ্ছিল তখনও তিনি খাবার স্পর্শ করেননি।

ছেলে মেয়ে উভয়েই সমান
কয়েক ঘণ্টা পর, ঠাকুরদাসের তিন সন্তান (দুই ছেলে ও এক মেয়ে) স্কুল শেষে বাড়ি ফেরে এবং মায়ের সামনে বড় ছেলে বাবলু জিজ্ঞেস করে, “মা, তুমি কি বাবার সাথে আমাদের কাপড়ের কথা বলেছ?” জবাব আসে হ্যাঁ বেটা আলোচনা তো হয়েছে, কিন্তু তোর বাবা বলছিলেন বাড়িতে টাকা নেই আর কোনো ব্যবসায়ী ধানের বাবৎ টাকা ধার দিতে প্রস্তুত নয়? এ কথা শুনে ছোট ছেলে কাবলু বলে, তোমাদের কাছে টাকা না থাকলে কিছু আসে যায় না, আমরা যে ছাত্রবৃত্তির টাকা পেয়েছি তা ফেরত দাও অথবা ওই টাকা দিয়ে টুসুর জন্য কাপড় কিনে দাও। এতে মা বলে তোমাদের ছাত্রবৃত্তির টাকা টমেটো চাষে খরচ হয়েছে এবং টমেটোর ফসলও নষ্ট হয়েছে। তারপরও বাচ্চারা নতুন পোশাকের জন্য জেদ করতে থাকে। বাবলু আবার বলে, আমারা দুই ভাইকেই নতুন পোশাক দিলেই হবে কারণ মীরা মেয়ে, তাকে দেওয়ার দরকার নেই। এতে মা রেগে যান এবং বলেন, দিলে সবাইকে দিতে হবে, ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, সবাই সমান, ছেলে মানুষকে স্বর্গে নিয়ে যাবে না, আমরা বৈষম্য করতে পারি না। কিন্তু শিশুরা অনড় থাকে যে তারা পোশাক চাই। তারপর তিন সন্তান অনেক আশা নিয়ে ঠাকুমার কাছে গিয়ে বলে ঠাকুমা তাদের জন্য কাপড় কিনবেন না? ঠাকুমা বললেন ঠিক আছে তোমার বাবা এলে আমি তার সাথে কথা বলব।

ধান বিক্রি করে বকেয়া পরিশোধ করবেন
পরের দিন ক্ষেত থেকে ঘরে ধান নিয়ে আসার পর ঠাকুরদাস যখন শ্রমিক নিয়ে ধান মাড়াই করছিলেন, তখন গ্রামের এক ট্রাক্টর মালিক এসে তাকে ডাকলেন। তৃতীয়বার আওয়াজ শুনে খামার থেকে বাড়ির দিকে এসে তার সাথে দেখা করতেই ট্রাক্টর মালিক কড়া সুরে জিজ্ঞেস করে, আরে ভাই, প্রথমে আমি যখন তোমাকে ঠাকুরদাস বলে ডাকলাম, তখন তুমি শুনলে না। যখন তোমাকে ঠাকুরা বলে ডাকলাম, তখন তুমি ঠিক শুনলে ? তাছাড়া সকাল থেকে কয়েকবার ফোন করেও রিসিভ করলো না কেন? ঠাকুরদাস বলে, দাদা, বাড়িতে ফোন ছিল। সবাই খামারে কাজ করতে ব্যস্ত ছিলাম। সেজন্য শোনা যায়নি। ট্রাক্টর মালিক ভাড়ার টাকা দাবি করলে সে স্পষ্ট উত্তর দিতে পারছেন না। এদিকে আরেক কৃষক কাঞ্চন যখন পদ্মলোচনের সন্ধানে সেখানে পৌঁছে তার বকেয়া তিন হাজার টাকা পরিশোধ করে, তখন পদ্মলোচন আবার ঠাকুরদাসকে বলে তার মতো কৃষক হয়ে তার আচরণ বজায় রাখতে, তবেই তোমার উন্নতি হবে। এদিকে স্বামীকে দেখে আসা সন্ধ্যা (ঠাকুরদাসের স্ত্রী) বলে, দাদা, টুসুর পর ধান বিক্রি করে তোমার বকেয়া টাকা আমরা পরিশোধ করব।

বার্ধক্য পেনশন পরিবারে খুশি ফিরিয়ে আনে
ছেলে, পুত্রবধূ ও সন্তানদের কষ্ট দেখে পরের দিন মালতী তার ছেলে ঠাকুরদাসকে বলে তোমার বাবা তোমাকে ডাকছে। তারপর তাদের ছেলেকে সামনে রেখে তারা দুজনেই বলে আমাদের বৃদ্ধ বয়সের পেনশনের টাকা যদি ব্যাংকে এসে থাকে তাহলে তা থেকে পরবের খরচ মেটানো হবে। এটি বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু ছেলে সেই টাকা খরচ করতে চায়নি। তার স্ত্রী তাকে বকাঝকা করে বলে, বুড়োটা ঠিকই তো বলেছে। এটা নিতে সমস্যা কি? তারপর সিদ্ধান্ত হল ঠিক আছে তাহলে কাল ব্যাঙ্কে গিয়ে চেক করব। পরের দিন ভুড়কু ও মালতী ব্যাংক থেকে 13 হাজার টাকা তুলে সবার জন্য পাঁচ হাজার মূল্যের জামাকাপড় এবং তেল, গুড় ইত্যাদি জিনিসপত্র কিনল। এর পর বাড়িতে আনন্দের পরিবেশ ফুটে উঠে এবং এখন পুত্রবধূ তার শাশুড়ি ও শ্বশুরকে, মা, বাবা বলে সম্বোধন করছে এবং নিজে চা বানিয়ে বিস্কুটের সাথে পরিবেশন করছে।

বদলে গেছে বাড়ির পরিবেশ
বাড়ির পরিবেশ অনেক বদলে গেছে। সবাই আনন্দে উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুত্রবধূ তার ভুল বুঝতে পারে এবং বুঝতে পারে তার শ্বশুরবাড়ি তার জন্য অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ। যতদিন ঐ মানুষগুলো বেঁচে থাকবে ততদিন তাদের আশীর্বাদ পেয়ে সুখে থাকতে পারবে তারা। সমাজে প্রবীণরা যাতে সম্মান পান সেজন্য এই কথাটা সকলকে জানাতে হবে।

Spread the love