শ্রদ্ধা ও আস্থার সঙ্গমস্থল শ্রী শ্রী হাতিখেদা ঠাকুর থান

পটমদা: কোল্হান প্রমন্ডলের সুপ্রসিদ্ধ হাতিখেদা ঠাকুর থান ভক্তগনের আকর্ষনের কেন্দ্র। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার বড়াম থানার লাউজোড়া গ্রামে অবস্থিত ঐ ঠাকুর থান হাতিখেদা মন্দির নামে সুপরিচিত। এখানে প্রতিদিন হাজার-হাজার মহিলা-পুরুষ নিজের মনোকামনা নিয়ে পৌঁছান। মনোকামনা পূর্ন হলে সিন্নি বা ভেড়া বলি দিয়ে মানত শোধ করেন। যদিও ঐ ঠাকুর আগের থেকেই জাগ্রত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত। কিন্তু বিগত প্রাই দুই দশকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রসার হওয়ায় এখন দিন প্রতিদিন মানুষের কাছে আকর্ষণীয় স্থান রূপে সুপরিচিত হয়েছে হাতিখেদা মন্দির। এখানে প্রধান পূজারী বা লায়া বাবু গিরিজা প্রসাদ সিং সর্দ্দারের প্রচেষ্টায় মন্দিরের চত্বর আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ও আকর্ষণীয় হয়েছে। তিনি দিন রাত মন্দিরের উন্নতির জন্য ভাবনা চিন্তা করে চলেছেন। হাতিখেদা মন্দির শুধু শ্রদ্ধা ও ভক্তির কেন্দ্রই নই বরং পর্যটন কেন্দ্র রূপেও বিকশিত। এখানে বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিম বাংলা, ওড়িশা, বিহার, উত্তর প্রদেশ, আসাম সমেত দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসেন। লাউজোড়া গ্রামের বাসিন্দা সহ উপমুখিয়া নিতাই চন্দ্র গরাই বলেন, এখানে যে ব্যক্তি নিজের মনের অন্তর থেকে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করে নিজের সমস্যা বা কামনা জানায় তার কামনা অবশ্যই পূর্ন হয়ে থাকে, সেই জন্য দিনের পর দিন ভক্তগনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতিদিন সকাল 9 টা থেকে পূজা আরম্ভ হয়
হাতিখেদা ঠাকুর থানে সারা বছর প্রতিদিন সকাল 9 টা থেকে পূজা-আরাধনা আরম্ভ হয় যা ভক্তগনের শেষ উপস্থিতি পর্যন্ত্য চলে। কিন্তু বছরে দুই দিন চড়ক পূজা উপলক্ষে (15 ও 16 বৈশাখ)হাতিখেদা পূজা পূর্ন রূপে বন্ধ থাকে। এই ঠাকুর থানের একটি বিশেষতা হচ্ছে যে পূজারী কোনো ব্রাহ্মণ জাতির নন বরং এখানের আদিবাসী সমাজের প্রতিষ্ঠিত লাউজোড়া গ্রামেরই ভূমিজ জাতির সর্দ্দার পরিবারের ব্যক্তি যাঁকে স্থানীয় ভাষায় লায়া বলা হয়। প্রধান লায়া গিরিজা প্রসাদ সিং সর্দ্দার এবং ওনার পরিবারের সদস্যরা পূজা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা সহ জেলা পরিষদ সদস্য স্বপন কুমার মাহাত বাবু বলেন যে হাতিখেদা বাবার পূজা মন্দিরে নয় গাছের তলায় করা হয়। সেখানেই বাবার মূর্তির পূজা হয় আর পুরো স্থান মন্দির নামেই প্রসিদ্ধ। তিনি জানান যে হাতিখেদা ঠাকুরের পূজা আদিকাল থেকে চলে আসছে। গিরিজা বাবুর আগে ওনার বাবা স্বর্গীয় লক্ষীকান্ত সিং সর্দ্দার পূজা করতেন।

হাতিখেদা ঠাকুরের কৃপায় প্রায় 300 পরিবারের চলে স্থায়ী রোজগার
হাতিখেদা ঠাকুর থান থেকে এলাকার কয়েক শ পরিবারের রোজগার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে চলে। মন্দিরের পাশে বিভিন্ন রকমের দোকান আছে যেখানে চাল, ডাল, তেল, মশলা থেকে কাঁচা তরকারি, মাছ, মাংস ও অনেক কিছু জিনিস পত্র বিক্রি করে মানুষ ভালো রোজগার করে। মন্দিরে বলি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভেড়া বিক্রি করেন প্রায় 50 জন ব্যাবসায়ী।

Spread the love