এমজিএম হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগ না থাকায় মৃত্যু দর বাড়ছে

এমজিএম হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগ না থাকায় মৃত্যু দর বাড়ছে

হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগ থাকা নিত্যান্ত প্রয়োজন, তাছাড়া হামলা ও দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের চিকিৎসা সম্ভব নয়

Jamshedpur (Mujtaba Haidar Rijvi ) : জামশেদপুরের সাকচিতে স্থিত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (MGM Hospital) কোল্হানের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল বলে সুপরিচিত, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এমজিএম হাসপাতালে নিউরোলজি চিকিৎসার অভাবে গুরুতর আহত ও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন তাঁরা প্রায় বেশিরভাগই চিকিৎসার অভাবে মারা যান। কারণ, মারধর ও দুর্ঘটনায় আহতদের বেশির ভাগ লোকের মাথায় আঘাত লেগে থাকে। এ ধরনের রোগীদের এমজিএম হাসপাতালে আনা হলে এখানকার চিকিৎসকরা শুধু মলম ও ব্যান্ডেজ লাগান। এরপর তাদের RIMS বা TMH-এ যেতে বলা হয়। ড্রেসিং করার সময়ই অনেক রোগী মারা যায় তাছাড়া RIMS-এ যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় কিছু রোগী মারা যায়। যারা অবস্থাসম্পন্ন তারা সরাসরি TMH এ যান। টিএমএইচে নিউরো সার্জনরা উপস্থিত থাকেন এবং তাঁরা সেখানে যথাযথ চিকিৎসা পান তাই তাঁদের জীবন রক্ষা সম্ভব হয়। কিন্তু যারা গরিব মানুষ তারা চিকিৎসার বিপুল খরচের জন্য টিএমএইচে যেতে ভয় পান এবং নিরুপায় হয়ে সরাসরি এমজিএম হাসপাতালে পৌঁছান। আহতদের অধিকাংশের স্বজন যাদের নিউরো সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই, তাঁরা এই আশায় এমজিএম হাসপাতালে আসেন যে এখানে তাঁরা উপযুক্ত চিকিৎসা পাবেন কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে উঠে না। ঝাড়খণ্ডের এক গুরুত্তপূর্ন এমজিএম হাসপাতালে নিউরোলজির বিভাগের নিত্যান্ত প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কেউ সেদিকে নজর দেয়নি। যেখানে জামশেদপুর বরাবরই ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ঘোড়াবান্ধার অর্জুন মুন্ডা বা এগ্রিকোর রঘুবর দাস। কোনো এক সময়ে ঝাড়খণ্ডের কমান্ড তাঁদের হাতে ছিল। পূর্ব জামশেদপুরের বিধায়ক সর্যু রাইও এখন পর্যন্ত এই প্রসঙ্গ তোলেননি। বর্তমানে যে মন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সামলাচ্ছেন, তিনি জামশেদপুরের বাসিন্দা বান্না গুপ্তা। কিন্তু, এমজিএম হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগের স্থাপনের কথা তিনিও কখনো ভাবেননি। এমনকি সাধারণ মানুষও জানে দুর্ঘটনা ও মারধরের ঘটনায় আহতদের বেশিরভাগই মাথায় আঘাত পান। এমন পরিস্থিতিতে এমজিএম হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমনিতে এমজিএম হাসপাতালে অন্যান্য রোগ এবং ছোটখাটো আঘাতের জন্য চিকিৎসার ব্যাবস্থা রয়েছে । কিন্তু মাথায় গুরুতর আঘাত লাগলে এমজিএমে চিকিৎসার কোনো ব্যাবস্থা নেই।
উদাহরণস্বরূপ, 19 মার্চ, আদিত্যপুরের ইচ্ছাপুরের বাসিন্দা কিশোর করণ ট্রেনে মাথায় গুরুতর ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এমজিএম হাসপাতালে নিউরো চিকিৎসক না থাকায় তার জীবন বাঁচানো যায়নি। 11 মার্চ, গোড়া পাহাড়ের বাসিন্দা রত্নাকর বাগতি জাদুগোড়ার রাখা মোড়ের কাছে একটি বাইকে ধাক্কায় মাথায় গুরুতর চোট পান। এমজিএম হাসপাতাল থেকে তাকে রিমসে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু রত্নাকর বাগতির স্ত্রী জানতেন না কীভাবে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়। তিনি অ্যাম্বুলেন্স কল করতে পারেননি. কিংবা কেউ তাকে সাহায্য করেনি। এমজিএম হাসপাতালেই মৃত্যু হয় রত্নাকর বাগতির। এমজিএম হাসপাতালে এমন ব্যক্তিদের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে যারা এই ধরনের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। প্রতি দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনে কিছু পরিবার এমজিএম হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগ না থাকার যন্ত্রণা ভোগ করছে এবং আমাদের বড় নেতারা প্রতিদিনই নিজেদের সুখ সুবিধা এবং কি ভাবে তারা পরের বার বিধানসভায় জিতবেন শুধু তাই চিন্তা ভাবনা করে যাচ্ছেন।

108 নম্বর অ্যাম্বুলেন্সের অবস্থা খারাপ
ঝাড়খণ্ডের 108 নম্বর অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার অবস্থা আরও খারাপ। মাথায় আঘাত পাওয়া গুরুতর আহতদের স্বজনরা 108 নম্বরে ডায়াল করে থাকেন। কিন্তু এই নম্বর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে বলে মনে হয় না। নম্বর পাওয়ার পরও যে ব্যাক্তি ফোন তুলেন তারা এদিক সেদিকের নানান কথা বলতে থাকেন। এখানে প্রশ্ন উঠে যে তিনি জানেন না যে আহতের অবস্থা সঙ্কটজনক হলে, তবেই তাকে রেফার করা হচ্ছে। তাকে সঙ্গে সঙ্গে কথা বলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাবার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না করে তিনি এখানে এবং সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেন। এভাবে অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় অনেকের মৃত্যু হয়।

Spread the love