লৌহনগরীতে ছোটখাটো বিবাদের জেরেও ঘটছে প্রাণঘাতী হামলা

লৌহনগরীতে ছোটখাটো বিবাদের জেরেও ঘটছে প্রাণঘাতী হামলা

Jamshedpur: শহরের মানুষের মেজাজ বদলে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বললে ভুল হবে না। এক সময় ছিল যখন দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ অনেক বেড়ে যেত বা পুরনো কোনো শত্রুতার কারণে কেউ কাউকে প্রাণঘাতী হামলা করত। কিন্তু বর্তমানে সামান্য তর্ক-বিতর্কের পর ছোটখাটো বিবাদেও মানুষ একে অপরকে খুন করছে। শুক্রবার রাতে গোলমুরি থানা এলাকার নেহেরু কলোনিতে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে রোমি দেবী নামে এক মহিলাকে বেস ব্যাট দিয়ে আঘাত করে, পাথর ছুড়ে আহত করে তারা। উদ্ধার করতে আসা স্ল্যাগ রোডের বাসিন্দা রোহিত ভূঁইয়া কেও মাথায় তলোয়ারের আঘাতে আহত কার তারা। আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য এমজিএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার গুরুতর অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা তাকে টিএমএইচে রেফার করেন।
ঘটনাটি কারণ সম্বন্ধে আহত মহিলা রোমা দেবী জানান, বিকেলে দেব কুমার মাহাতো নামে এক ব্যক্তি তার বাড়ির ঠিক সামনে প্রশাব করছিল। তিনি তাকে তাঁর বাড়ির সামনে প্রশাব করতে মানা করেন তাতে দেব কুমার ক্ষিপ্ত হয়ে মহিলাকে গালিগালাজ করে হুমকি দিতে শুরু করে যে সে তার বাড়ির ভেতরে গিয়ে প্রশাব করবে। কিছুক্ষণ পর সে আরো দুই-চারজন ছেলেদের সাথে নিয়ে এসে ওই মহিলাকে গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর বিষয়টি শান্ত হয়ে গেলেও গভীর রাতে দেব আবার তার প্রায় ডজন খানেক সঙ্গী নিয়ে ওই মহিলার বাড়িতে ঢুকে তার ওপর হামলা চালায়। এরপর উদ্ধার করতে আসা রোহিত ভূঁইয়াকেও বেস ব্যাট ও তরবারি দিয়ে আক্রমণ করা হয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। মহিলা ও আহত যুবককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নেশাগ্রস্ত যুবক ছুরিকাঘাত করে আহত করে এক ব্যাক্তিকে
বিষ্টুপুর থানা এলাকার ধাতকিডিহ বি ব্লক গোডাউন এলাকায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে, বিট্টু নামে এক মাতাল যুবক বস্তির বাসিন্দা ওয়াসিম আক্তারকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে। এ হামলায় ওয়াসিম গুরুতর আহত হন, তাকে চিকিৎসার জন্য এমজিএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার কারণ ছিল বিট্টুর কাকাতো ভাই রমজানের সঙ্গে ওয়াসিমের কথা কাটাকাটি। বিট্টু পকেট থেকে ছুরি বের করে ওয়াসিমের কোমরের কাছে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়।

যুগসালাইয়ে ডিজে বাজানো নিয়ে বিবাদে প্রাণঘাতী হামলা, পুড়িয়ে দেওয়া গাড়ি
যুগসলাইয়ের গৌশালা নালা রোডে অবস্থিত পাওয়াট মহল্লায় ডিজে বাজানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক যুবকের ওপর ছুরি দিয়ে হামলা করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে চিকিৎসার জন্য টিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার পর একপক্ষ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও করে। এরপরও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় এক পক্ষ অপর পক্ষের বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো ন্যানো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ কারণে গাড়িটি পুড়ে যায়। গোটা ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। বিষয়টি আরও তদন্ত করা হচ্ছে।

মাদকের ব্যবসা একটি বড় কারণ
এ ধরনের ঘটনার পেছনে বড় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে নগরীতে ব্যাপক মাদক ব্যবসা। তবে এ ব্যবসা ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে শহরজুড়ে ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। এতে কয়েকদিনে একের পর এক বড়সড় সাফল্য পায় পুলিশ। তার পরও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে এই অবৈধ মাদক ব্যবসা চলছে বলে জানা গেছে। এর বেশির ভাগই শিকার শহরের যুবকরা। এ কারণে তারা ছোট-বড় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাতে পিছপা হয় না। এমতাবস্থায় এ ধরনের ঘটনা বন্ধে মাদকের বিরুদ্ধে এক দফা ধারাবাহিক পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কি বলেন
এমজিএম হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান ডাঃ কেশব জি বলেছেন যে ছোটখাটো বিবাদে যারা হঠাৎ মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তাদের মনে মানসিক চাপের লক্ষণগুলিও কোথাও না কোথাও দায়ী। অন্য কথায় একে বিষণ্ণতাও বলা যেতে পারে। এমন ব্যক্তির মন প্রায়ই বিষণ্ন থাকে। তার স্বভাব খিটখিটে হয়ে যায়। তারা শক্তি হারিয়ে ফেলে। লকডাউন পিরিয়ডে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সংকটের কারণে এ ধরনের সমস্যাও বেড়েছে। আমরা যদি নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের কথা বলি, যাই হোক, যারা ক্রমাগত মাদক সেবন করে তাদের মধ্যে মানসিক বিকারের অনেক উপসর্গ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। সবচেয়ে বড় কথা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়, যা এ ধরনের ঘটনার জন্য বেশি দায়ী।

Spread the love