রাঁচিতে তুমুল বিক্ষোভ, পুলিশের ওপর পাথর ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীরা
Ranchi: বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার রাঁচির প্রধান সড়কে প্রচণ্ড হাঙ্গামা হয়। জুমার নামাজের পর ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে মিছিল হঠাৎ সহিংস রূপ নেয়। মিছিলে থাকা লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা দোকানপাট, ভবন ও যানবাহন ভাঙচুর করে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও বাতাসে গুলি চালায়। হাঙ্গামায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। 13 জনকে রিমস-এ ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাঁচির এসএসপি সুরেন্দ্র কুমার ঝা, সিটি এসপি অংশুমান, গ্রামীণ এসপি নওশাদ আলম, ডেইলি মার্কেটের এসএইচও অবধেশ ঠাকুর এবং বহু পুলিশকর্মী, সাংবাদিক এবং পথচারী পাথরের আঘাতে ও গুলিতে আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, দুপুর দেড়টার দিকে একরা মসজিদের কাছে প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভে শামিল লোকেরা বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মাকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রধান সড়ক ধরে ডেইলি মার্কেটের দিকে চলে যায়। সেখানে আগে থেকেই মোতায়েন পুলিশ কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের সামনে এগোতে বাধা দেয়। এরপরই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। নিয়ন্ত্রণহীন জনতা পাথর ছুড়ে পুলিশকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। এ সময় যানবাহন পার্কিং ও রাস্তার পাশে রাখা ডজন খানেক যানবাহন নষ্ট হয়ে লোকজনের উপদ্রবে। এর মধ্যে সাংবাদিকদের গাড়িও ছিল। এই হট্টগোল দেখে প্রধান সড়কের দোকানপাটের শাটার বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। সর্বত্র বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এরপরই শহরের অন্যান্য এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। যারা অত্যাবশ্যকীয় কাজে বেরিয়েছিলেন তারাও তড়িঘড়ি করে নিজ নিজ বাড়ি ও নিরাপদ স্থানে চলে যান।
রাস্তায় জড়ো হওয়া ভিড়কে সরায় পুলিশ
ঘটনার খবর পেয়ে রাঁচির ডিসি ছবি রঞ্জন, ডিআইজি অনীশ গুপ্তা এবং জ্যাপ ওয়ানের কমান্ড্যান্ট পুলিশ বাহিনী সহ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এখানে এসে বাহিনীকে বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ করা হয়। এর পরে দলটি হিন্দপিড়ি, লেক রোড, চার্চ রোড, রতন টকিজ গলি প্রভৃতি জায়গায় জড়ো হওয়া ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে। পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে এসে পাথর ছোঁড়েদের মারধর করে। এ সময় পদদলিত হয়ে অনেক বিক্ষোভকারী পড়ে গিয়ে আহত হন। হিন্দপিড়ি সেন্ট্রাল স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকে ছোঁড়া পাথরে আহত হয়েছেন এক জ্যাপ জওয়ান। প্রায় আড়াই ঘণ্টার হাঙ্গামার পর রাঁচি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ নিয়ন্ত্রণহীন জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপরও সন্ধ্যা পর্যন্ত হিন্দপিড়ি, চার্চ রোড, কারবালা চক, আপার বাজারসহ আশপাশের এলাকার রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়।
মেইন রোড এলাকায় 144 ধারা জারি
প্রধান সড়কে হট্টগোলের পর জেলা প্রশাসন 144 ধারা জারি করেছে। প্রশাসনিক দলও মেইন রোড এলাকায় লাউডস্পিকারের মাধ্যমে এ বিষয়ে তথ্য দিতে থাকে। প্রশাসনিক আদেশে বলা হয়েছে, অ্যালবার্ট একা থেকে সুজাতা চক পর্যন্ত পাঁচশো মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে 144 ধারা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ছবি রঞ্জনের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, এই সময়ে এক জায়গায় পাঁচ বা তার বেশি লোক জড়ো হতে পারবে না। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে
ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় মেইন রোড এলাকায় ফ্ল্যাগমার্চ করে পুলিশ। একই সময়ে, পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সাথে সংলগ্ন থানা এলাকায় রাস্তায় ও এলাকায় টহল দিচ্ছেন। একই সঙ্গে নগর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করছেন এবং প্রতি মুহূর্তের তদারকি করছেন। এই ধারাবাহিকতায় জুনিয়র পুলিশ অফিসারদেরও অফিসারদের দ্বারা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনার খবর পেয়ে আপারবাজার এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। সেখানে ফল বিক্রি করা দোকানদারদের মারধর ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।