ত্রিকোণ প্রেমের জেরে ট্রিপল মার্ডার
– গোলমুরি পুলিশ লাইন ট্রিপল মার্ডার কেসের রহস্য উদ্ঘাটন করল পুলিশ।
– মহিলা কনস্টেবলের দ্বিতীয় প্রেমিক সুন্দরকে খুন করতে চেয়েছিল এসএসপির চালক।
– পরিস্থিতি অসামাল হওয়ায় সবিতা ও তার মা-মেয়েকে খুন করে রামচন্দ্র সিং জামুদা।
Jamshedpur : নকশাল হামলায় স্বামীর মৃত্যুর পর পুলিশে অনুকম্পার আধারে চাকরি পান সবিতা। তাঁর স্বামী নকশাল বিরোধী অভিযানে পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। কিছু সময় পর জামশেদপুর এসএসপি অফিসে তাঁর পোস্টিং হয়। সেখানে চালক হিসেবে কার্যরত রামচন্দ্রের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে উঠে। আবার সবিতার সাথে সুন্দরেরও সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সবিতা, রামচন্দ্র ও সুন্দরের ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কই এই হত্যাকাণ্ডের কারন হয়ে দাঁড়ায়। রামচন্দ্র তার ও সবিতার সম্পর্কের মাঝে কাঁটা হয়ে উঠা সুন্দরকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে ফেলে। 19 জুলাই সে তার পরিকল্পনা মত সুন্দরকে হত্যা করার সব সরঞ্জাম নিয়ে সবিতার ফ্ল্যাটে পৌঁছায় সে। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতিবশতঃ রামচন্দ্র প্রথমে সবিতাকে, তারপর তার মেয়েকে এবং তারপরে মাকে হত্যা করে। হত্যার পর পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য সে কোনো কিছু না জানার ভান করে এসএসপি অফিসে তার ডিউটি করতে থেকে সে।
2015 সালে, সবিতা এসএসপি অফিসে ডিউটি তে যোগ দেন। সেখানেই কাজ করার সময় রামচন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় সবিতার। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। রামচন্দ্র সোনারির কাগল নগরের বাসিন্দা, সে বিবাহিত ও তার তিনজন সন্তানও আছে। রামচন্দ্র বিবাহিত জেনেও সবিতার পরিবারের সদস্যরাও তাদের সম্পর্কের সম্বন্ধে সম্মত হন। সে অনেক বার সবিতার ফ্ল্যাটে রাতও কাটাতো। কিন্তু বছর দেড়েক আগে বিষ্টুপুরের এক মলে কাজ করা সুন্দর টুডুর সঙ্গে সবিতার পরিচয়ের পর সবিতা রামচন্দ্রের কাছ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন শুরু করেন।
সুন্দর ও সবিতা প্রায়ই ফোনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলতো। সুন্দর সবিতার ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া শুরু করে। রামচন্দ্র বিষয়টি জানতে পারে। প্রথমে সে সবিতাকে বিষয়টি নিয়ে বুঝিয়ে বলার পরেও তারা মেলামেশা কম করেনি। তারপর রামচন্দ্র সুন্দরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা মাফিক সে সবিতার বাড়িতে একটি গিয়ার লিভার (লোহার রড) লুকিয়ে রাখে। সে জানতে পারে যে 19 জুলাই সুন্দর সবিতার বাড়িতে আসবে তাই সেও সেদিন রাত 9 টায় সবিতার বাড়িতে পৌঁছে সুন্দরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সেদিন কোনো কারণবশত সুন্দর সেখানে আসেনি। তারপর হঠাৎ সবিতা ও রামচন্দ্রের মধ্যে সুন্দরকে নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে রামচন্দ্র রড দিয়ে সবিতাকে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। চিৎকার শুনে পাশের ঘরে শুয়ে থাকা সবিতার মেয়ে গীতা তার মায়ের ঘরে পৌঁছায় এবং মৃতদেহ দেখে সেও চিৎকার করে উঠে। একইভাবে সবিতার মা ও চিৎকার শুনে সেখানে পৌঁছান। তখন রামচন্দ্র রড দিয়ে আঘাত করে তাদের দুজনকেও মেরে ফেলে। তিনজনকেই হত্যা করার পর গভীর রাতে ফ্লাট থেকে বেরিয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায় সে। হত্যা করার জন্য ব্যাবহৃত রডটি সে রাস্তায় ফেলে দেয়।
তিনজনকে হত্যা করার পর রামচন্দ্র সেই রাতে বাড়ি না ফিরে বাইরেই থেকে যায়। পরের দিন সে তার কাজে যোগ দেয়। 21 জুলাই, সবিতার প্রতিবেশীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান যে ফ্ল্যাটটি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরে ঘরের তালা ভেঙে লাশ বের করা হয়। যখন এ বিষয়ে পুলিশ খবর পায় তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না রামচন্দ্র। খবর পেয়ে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। কঠোর জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।