ঘাটশিলাতে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে চলে লাথি-ঘুষি, আট ঘণ্টা গেট জ্যাম

আন্দোলনের আঠারো দিনে অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষোভ, এইচসিএলের মেন্ গেটে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি

ঘাটশিলা: আঠারো দিন ধরে আন্দোলনরত এইচসিএল-আইসিসি বাঁচাও সংগঠন, মৌভাণ্ডারে বন্ধ থাকা এইচসিএল-আইসিসি কোম্পানি অবিলম্বে চালু, স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থান, মেরামতসহ সাত দফা দাবিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কোম্পানির প্রধান ফটক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে বেধড়ক লাথি ও ঘুষি চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হয়।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জেপি করমালি, এসডিপিও কুলদীপ টপ্পো, ইন্সপেক্টর সন্দীপ রঞ্জন, ঘাটশিলা থানার ইনচার্জ শম্ভুনাথ গুপ্ত, মহিলা থানার ইনচার্জ রুক্মিণী কুমারী, বিডিও কুমার এস অভিনব, সিও রাজীব কুমার, মৌভান্ডার থানার ইনচার্জ সোনু কুমার পৌঁছান। ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় গ্রুপকে বোঝানোর পর বিষয়টি মিমাংসা হয়।

সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনা ব্যর্থ হয়। এর পরে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এইচসিএল আইসিসি বাঁচাও সংগঠন বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এইচসিএল কোম্পানির গেট এবং জেনারেল অফিস অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই জন্য বৃহস্পতিবার সকাল 6টা থেকে কোম্পানির প্রধান ফটক ও সাধারণ অফিসের গেট জ্যাম হয়ে যায়। সাধারণ শিফটে ডিউটি ​​করতে আসা স্থায়ী শ্রমিকদের কোম্পানির ভেতরে যেতে বাধা দেয় আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওপি ইনচার্জ সোনু কুমার বলেন, আপাতত স্থায়ী শ্রমিকদের কোম্পানির ভেতরে যেতে দিন। আজ সকাল সাড়ে 10টায় আলোচনা না হলে কোম্পানির ভেতরে থাকা শ্রমিকদের বের হতে দেওয়া হবে না।
আলোচনা ব্যর্থ হয়. তাই দুপুর সাড়ে 12 টার দিকে টিফিনের সময় কোম্পানির গেট থেকে বের হওয়া স্থায়ী শ্রমিকদের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়।
এ সময় স্থায়ী শ্রমিকরা কিছুক্ষণ শান্ত থাকার হঠাৎ করে ফটকে জড়ো হয় 40 থেকে 50 জন। সিকিউরিটি কে দিয়ে গেট খুলিয়ে বাইরে বেরোতে চাওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

কোম্পানির গেট ও জেনারেল অফিস আট ঘণ্টা জ্যাম
শ্রমিকরা হট্টগোল করলে কোম্পানির গেট ও সাধারণ কার্যালয় আট ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এইচসিএল আইসিসি বাঁচাও সংগঠন ও স্থায়ী শ্রম সংস্থার আহ্বায়ক ফ্যাবিয়ান তিরকি, রাজু কর্মকার, জিপ সদস্য পূর্ণিমা কর্মকার, কমল দাস, অমিত রাই, মলয় মজুমদার, শঙ্খো মুর্মু, সঞ্জয় বেহেরা, মুকেশ কর্মকার, শম্ভু জেনা, গণেশ জেনা, মদন মুর্মু, শঙ্খ মুর্মু। জ্যাম সাইটে উপস্থিত মৌভান্ডার ওপি-র ইনচার্জ সোনু কুমার, বিডিও কুমার এস অভিনব এবং ম্যাজিস্ট্রেট সন্তোষ কুমার শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন, কিন্তু তারা শোনেননি।

5 তারিখে ইডির সঙ্গে কর্মীদের ত্রিপক্ষীয় আলোচনা
হাঙ্গামার পর প্রশাসন পরিস্থিতি নিজের হাতে নেয় কোম্পানির গেটের সামনে আসার পর স্বীকৃত ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওম প্রকাশকে ফোন করে ইডির কাছে আলোচনার জন্য সময় চাওয়ার আবেদন করা হয়। এর পরে, ওম প্রকাশ সিং জেনারেল অফিসে যান এবং 5 মার্চ শনিবার ইডি-র সাথে আলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করেন। এ সময় সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত গেটে জ্যাম থাকে।

শ্রমিকদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন প্রদীপ বালমুচু
প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ ডঃ প্রদীপ কুমার বালমুচু কোম্পানির গেটে পৌঁছে শ্রমিকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান। এ সময় কোম্পানির এইচআর প্রধান অর্জুন লোহরাকে ডাকা হয়। তিনি বলেন,আলোচনা ছাড়া শ্রমিক সমস্যার সমাধান হবে না।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অপেক্ষা করতে থাকেন
ঘটনার সময় সাধারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শান্ত থাকেন। জেনারেল অফিসের ভেতরে যাওয়ার পর তারা এই বলে বেরিয়ে যান যে, ম্যানেজমেন্ট যদি কর্মীদের সঙ্গে কথা না বলে, তাহলে আমরা অফিসের ভেতরে ক্ষুধার্ত-পিপাসায় পড়ে থাকব। এর আগেও একবার রাত 11টা পর্যন্ত একইভাবে অফিসের ভেতরে থাকতে হয়েছে। এখন আর আমাদের কষ্ট হবে না। তাই তারা বেরিয়ে এসে কোম্পানির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দর্শক হয়ে থাকেন।

প্রধান ফটকসহ পাঁচটি গেটে কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে
সূত্রের খবর, কোম্পানির প্রধান ফটকসহ পাঁচটি গেটেই শ্রমিকরা অবস্থান করছিলেন। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অস্থায়ী শ্রমিকরা পুরো রাস্তা অবরোধ করে রাখে, যাতে ভেতরে থাকা স্থায়ী শ্রমিকরা বের হতে না পারে।

Spread the love