বছর ঘুরলে বাংলায় ভোট, তার আগেই ‘নির্বাচনী যুদ্ধ’ শুরু মোদি-মমতার
Purulia (Somnath Gope): বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই নির্বাচনী যুদ্ধের ঢাক বেজে উঠেছে রাজ্যে। আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি, হিংসা, তুষ্টিকরণ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম— একের পর এক ইস্যুতে বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদীর তোপ, তৃণমূল শুধু হাজার হাজার শিক্ষকের নয়, লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের উত্তর দিতে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চুপ করে থাকেননি। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে পাল্টা জবাব দিলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে সিঁদুরের রাজনৈতিক বিপণন করছেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়, দেশের হয়ে বিদেশে গিয়ে গলা ফাটানো উচিত। মমতার সাফ কথা, রাজনীতির হোলি খেলতে বাংলায় এসেছেন মোদী, কিন্তু বাংলার মানুষ তাতে প্রভাবিত হবেন না। একদিকে মোদী তুলে আনছেন উন্নয়ন, সুশাসন ও হিন্দুত্বের বার্তা, অন্যদিকে মমতা দাঁড়িয়ে আছেন আঞ্চলিক আত্মপরিচয়, বাংলা সংস্কৃতি ও তৃণমূলের সংগঠনের শক্তি নিয়ে। 2026 সালের ভোটের লড়াই শুধু দলগত নয়, দুই রাজনৈতিক মডেলের মুখোমুখি হওয়ার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি বারবার বাংলার গলিতে-গলিতে পরিবর্তনের বার্তা দিতে চাইছে, আর তৃণমূল বলছে, বহিরাগতরা বাংলার মাটিকে দখল করতে পারবে না। এখনো ভোটের নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা হয়নি, কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনা ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। আলিপুরদুয়ারের জনসভা, পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন, একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ— রাজ্যের রাজনীতিতে যেন বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াই কার্যত শুরু হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আলিপুর- দুয়ারের সভায় বলছেন, বাংলাকে এখন হিংসা, দাঙ্গা, মহিলা নির্যাতন, এবং দুর্নীতির রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলছেন, বিজেপি শুধু বিভাজনের রাজনীতি করে, বাংলার মাটি তাদের গ্রহণ করবে না। রাজ্যের রাজনৈতিক চিত্রনাট্য দিনে দিনে আরও নাটকীয় হয়ে উঠছে। একদিকে কেন্দ্রীয় শক্তির উপর নির্ভরশীল বিজেপি, অন্যদিকে আঞ্চলিক শিকড় শক্ত করে ধরে রাখা তৃণমূল। শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, মহিলাদের সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, গ্রামীণ উন্নয়ন, কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা— সবই ভোটের বড় ইস্যু হয়ে উঠছে। আগামী নির্বাচনে কাদের পক্ষে হাওয়া বইবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়ে গেছে জোর চর্চা। ভোটাররা কি মোদীর উন্নয়নের ডাকের সাড়া দেবেন, নাকি মমতার আঞ্চলিক নেতৃত্বকেই ভরসা করবেন, তা নিয়ে এখনো প্রশ্নের শেষ নেই। একদিকে মোদী বাংলায় বারবার এসেছেন নির্বাচনী মঞ্চ থেকে বার্তা দিতে, অন্যদিকে মমতা জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে, বাংলার রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে, আর সেই উত্তাপের আঁচে গরম হতে শুরু করেছে ভোটের ময়দান।