শিমলা চুক্তি বাতিল বনাম সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত তবে কি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা?
Special Report (Somnath Gope) : ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নতুন দাবানলের মুখে গত, 22 এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হানায় 27 জন পর্যটকের মৃত্যুতে কেঁপে উঠেছে গোটা ভারত। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশবাসী। জঙ্গি সংগঠন ‘লস্কর-ই-তৈবা’র দিকে অভিযোগের আঙুল উঠতেই নয়াদিল্লি একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। ভারতের পাল্টা প্রত্যাঘাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতির সাথে সাথে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ শুরু হয়ে যায়, দুই দেশের প্রশাসনিক স্তরে, ভারতের তরফে গ্রহণ করা হয় বেশ কিছু কূটনৈতিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত,পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল থেকে আটারি ও ওয়াঘা সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ,1960 সালের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত, এছাড়াও আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগ তোলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক,বিশ্ব মঞ্চে ভারতের বার্তা, “Pakistan sponsors terrorism” আর এর পাল্টা জবাব দিতে পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (NSC) এক জরুরি বৈঠক করে 1972 সালের ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে, এই চুক্তির ফলে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) একটি বৈধ আন্তর্জাতিক সীমারূপে গৃহীত হয়েছিল—তা বাতিল হওয়ায় সীমান্ত সংঘর্ষের ঝুঁকি প্রবলভাবে বেড়ে গেছে। শিমলা চুক্তির বাতিল মানেই যুদ্ধ?
1971 সালের ভারত-পাক যুদ্ধের পর 1972 সালের 2 জুলাই শিমলায় সাক্ষরিত হয়েছিল এই ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি, যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের জুলফিকার আলি ভুট্টো সম্মত হয়েছিলেন সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে। কিন্তু, 1948 সালে সিয়াচেন যুদ্ধ, 1999 সালে কারগিল যুদ্ধ— এই দুই ক্ষেত্রেই শিমলা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে এবার, চুক্তি স্থগিতকরণ নয়—সম্পূর্ণ বাতিল, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কাকে। কাশ্মীরে উপর ধারাবাহিক জঙ্গী আক্রমণের প্রেক্ষিতে, এবার জাতিসংঘ, G20 ও ব্রিকস সম্মেলনগুলিতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর বলে তুলে ধরার রূপরেখা তৈরি করেছে ভারত। সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে জল-কূটনীতি-কে যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করার যে পদক্ষেপ, তা পাকিস্তানের অর্থনীতি ও কৃষি-নির্ভর জনগোষ্ঠীর উপর বড়সড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। তার ফলে সীমান্তে যেকোনো সময় সংঘর্ষ হতে পারে, এই মুহূর্তে ভারত পাক সম্পর্ক চূড়ান্ত অবনতির দিকে কিন্তু ভারতের অবস্থান এখনও আক্রমণ নয়, বরং কৌশলী প্রতিরোধের দিকে পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, ফলে যদি যুদ্ধ এখন না-ও হয়, কিন্তু শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে দুই দেশের মধ্যে।