জামশেদপুরে বঙ্গীয় উৎসব এর বর্ণাঢ্য আয়োজন, ভিড় ছিল দেখার মতন
Jamshedpur : জমশেদপুরের বিষ্টুপুর গোপাল ময়দানে 16 মার্চ ‘বঙ্গীয় উৎসব 2025’ অনুষ্ঠিত হয়। এই রাজ্য-স্তরের অনুষ্ঠানে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, সাহিত্যিক ও দর্শকরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী রামদাস সোরেন, হাতা মাতাজী আশ্রমের বিনয় বাবাজী, প্রাক্তন বিধায়ক কুণাল ষড়ঙ্গি , উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান পার্থ সারথি চ্যাটার্জী, সভাপতি অমিত কুমার পাত্র, কার্যকরী সভাপতি অপর্ণা গুহ, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, পূরবী ঘোষ, অংশু সরকার, প্রকাশ মুখার্জী ও মহাসচিব উত্তম গুহ। তাঁরা প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। শিক্ষা মন্ত্রী রামদাস সোরেন ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি জানান, বর্তমান সরকার মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী এবং বাংলা ভাষার শিক্ষার ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। চেয়ারম্যান পার্থ সারথি চ্যাটার্জী স্বাগত ভাষণ দেন, এবং অপর্ণা গুহ ‘বঙ্গবন্ধু’র সমন্ধে বলেন।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অঞ্জু সরকার ও তাঁর দল রোগ মুক্তি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য ভুজঙ্গাসন, নৌকাসন, অর্ধচন্দ্রাসন, শশাঙ্কাসন, একপদশীর্ষাসন সহ 27টি যোগাসনের প্রদর্শনী করেন। চাইবাসার শিল্পীরা তাঁদের নৃত্যশৈলীর মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। প্রখ্যাত বাঁশি বাদক অশোক দাস ও মাউথ অর্গান বাদক বিকাশ কুমার শীটের যুগলবন্দী দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। চাস বোকারোর যোগ ওয়াইয়োগিক আসন মুদ্রা স্বাবলম্বী বিদ্যাপীঠ পুকুঙ্কি আশ্রমের মণ্ডলী যোগ ও আধ্যাত্মিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। রাঁচির সজল ব্যানার্জী ও তাঁর দল সঙ্গীতময় পরিবেশনা দেন। মানভূম পুরুলিয়ার কুন্দন কুমার ‘স্বর্গ উপরে…’, ‘রাশিয়ান লুক…’, ‘আঁচল ঢাকা…’ এবং কানিকা কর্মকার ‘শালপিয়াল পলাশ বনে…’, ‘ভালো বেসেছিলে শুধু তোকে…’ প্রভৃতি রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধন করেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। বঙ্গীয় উৎসব কমিটির পেট্রন অংশুমান চৌধুরী, সভাপতি অমিত কুমার পাত্র, কার্যকরী সভাপতি অপর্ণা গুহ, শুভঙ্কর চ্যাটার্জী, পূরবী ঘোষ, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, মহাসচিব উত্তম গুহ প্রমুখ বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য একটি দাবি পত্র উপস্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা এবং সকলকে এটি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেন। প্রাক্তন বিধায়ক কুণাল বাংলা গান ‘এটা কি 2441139 বেলা বোস…’ পরিবেশন করেন। জমশেদপুরের সৌমি বোস, সন্দীপ বোস, সুদীপ্তা দাস ও তাঁদের দল বসন্ত ঋতুর থিমে কথক ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপর নৃত্য পরিবেশন করেন। স্টার জলসা সুপারস্টার খ্যাত রাঁচির অঙ্কিতা বসু ব্যানার্জী ‘চুপি চুপি …’, ‘ ভালবেসে সখী নিবৃতে যতনে…’, ‘অবুঝ মন বোঝেনা কারণ…’ গানগুলি পরিবেশন করেন, যেখানে এআর হার্ট বিটসের রানা ব্যানার্জী তাঁর সঙ্গে সঙ্গত করেন। সন্ধ্যায় বাংলা লোকগীতি শিল্পী পৌষালী ব্যানার্জীর মন্ত্রমুগ্ধকর পরিবেশনা হাজারো দর্শককে মুগ্ধ করে রাখে। অনুষ্ঠানে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন। উৎসবটি শুধুমাত্র বাঙলা ভাষার জন্য নয়, বরং ঝাড়খণ্ডের সমগ্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হয়ে ওঠে। আয়োজক কমিটি এই উৎসবকে স্মরণীয় করতে সেলফি পয়েন্ট, ফুড ফেস্টিভ্যাল সহ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সংস্কৃতির সমৃদ্ধ স্টল স্থাপন করে।
বঙ্গীয় উৎসব কমিটির পার্থ সারথি চ্যাটার্জী, অমিত কুমার পাত্র, অপর্ণা গুহ, পূরবী ঘোষ, অঞ্জু সরকার, মিথিলেশ ঘোষ, শুভঙ্কর চ্যাটার্জী, বাবুলাল চক্রবর্তী, অশোক দত্ত, প্রকাশ মুখার্জী, বিনোদ দে, উত্তম গুহ, অমিত মাইতি, সঞ্জীব আচার্য, সুবাস সিং রায় সহ আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সব্যসাচী চন্দ ও অলিভিয়া বিশ্বাস ও ধন্যবাদ জানান অশোক দত্ত।